ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে অনিয়ম, বিভিন্ন অংশে ফাটল!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজারের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন চারতলা ভবন নির্মাণে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার শিডিউল মোতাবেক কাজ না করায় বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে! অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ঠিকাদার যেনতেনভাবে কাজ বাস্তবায়ন করায় ভবনের বিভিন্ন অংশের দেওয়াল ও ফ্লোরে ফাটল দেখা দিয়েছে। পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন চারতলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিল চট্টগ্রামের মেসার্স কাসেম এন্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিদষ্টান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের বিভিন্ন অংশে সম্প্রতি ফাটল দেখা দেওয়ায় নতুন ভবনের স্থায়ীত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পেকুয়ার সচেতন মহল। স্থানীয়রা অবিলম্বে ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদার, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, দুদক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জোর দাবিও জানিয়েছেন।

বিভিন্ন উৎস্য থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ১৪ কোটি টাকারও বেশি বাজেটের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সদ্য সমাপ্ত নতুন ৪ তলা ভবনটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছিলেন চট্টগ্রামের ‘কাসেম এন্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্টান নিজেরা কাজটি বাস্তবায়ন করেনি। সাব-কন্টাকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নতুন চারতলা ভবনের কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাগর। আর সাব-কন্ট্রাকে চারতলা ভবনের কাজে সীমামীন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার কারণে সম্প্রতি ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে।

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইংরেজী দুপুরে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন নির্মিত চারতলা ভবনের নিচ তলায় হাসপাতালের রান্নাঘরের প্রবেশের সামনের দেওয়ালের দুই দিকে ফাটল দেখা দিয়েছে। নিচ তলার ফ্লোরেও বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এভাবে ভবনের আরো বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের দেওয়ালেও নিন্মমানের রং লাগানো হয়েছে। হাসপাতালের ফ্লোরে ঢালাই দেওয়ার পূর্বে নিচে শিডিউল মোতাবেক ইট, বালি ও কংকর দেওয়া হয়নি। পুরো ভবন নির্মাণ কাজে ঠিকাদার সাগর অত্যন্ত নিম্নমানের সিমেন্ট, লোহা ও বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করেছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাব ঠিকাদার সাগরের লোকজন পেকুয়া স্বাস্থ্য কমেেপ্লক্সের চার তলা ভবন নির্মাণের শুরুতে মাটির নিচে ৮৫ ফুট পাইল বসানোর কাজেও অনিয়ম করেছে। ফাইল বসানোর সময় ৭ থেকে ১০ ফুট ভেঙ্গে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদেও মতে, পাইল তৈরি সঠিক না হলে এবং নিয়ম অনুযায়ী মাটির নিচে পুতা না হলে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সাব ঠিকাদার সাগর পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের সময় নিজের ইচ্ছেমতো কাজ চালিয়ে গেলেও অনিয়ম-দূর্নীতি বন্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কক্সবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোরশেদুল আলমসহ সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ ঊঠেছে, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে তদারকীর দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোরশদুল আলমকে ঘুষের টাকায় ‘ম্যানেজ’ করেই সাব-ঠিকাদার সাগরের লোকজন অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষকে কাজও বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী প্রকৌশলী মোরশেদুল আলম কক্সবাজারে কর্মরত থাকার সুবাধে কোন হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজ হলেই বরাবরের মতো ঠিকাদারের লোকজনের সাথে আঁতাত অবৈধ সুবিধা নিয়ে সরকারী কাজ তদারকীতে চরম অবহেলারও অভিযোগ রয়েছে।

আমরা পেকুয়াবাসী সংগঠনের মহাসচিব আবদুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিনিধিকে জানান, ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন চারতলা ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করায় ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ জন্য তিনি ঠিকাদারের অনিয়ম-দূর্নীতির পাশপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতিকেও দায়ী করেছেন।

সদ্য সমাপ্ত পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটলের কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মোরশেদুল আলম জানান, পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ফাটলের বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। তিনি ঠিকাদারকে বিষয়টি নিয়ে তাগাদা দিয়েছেন। ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটলের বিষয়ে ওই প্রকৌশলী স্বীকার করে আরো বলেন, গত ২/৩ মাস পূর্বে ঠিকাদার কাজ শেষ করেছে। নতুন ভবন হয়তো বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। দেওয়ালে ও মেঝোতে ফাটল দেখা দিলেও ভবনের স্ট্রকচারের কোন ক্ষতি হবেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

পাঠকের মতামত: